ঢাকা,   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

The South Asian Times | সাউথ এশিয়ান টাইমস

দুদক আমাকে কৌশলে গ্রেফতার করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়: জাহাঙ্গীর আলম

আমার পক্ষ থেকে জায়েদা খাতুনের প্রচারণায় বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না : আজমত উল্লা

জিসিসি নির্বাচন

রেজাউল বারী বাবুল,  গাজীপুর প্রতিনিধি

আপডেট: ১৪:২৪, ২০ মে ২০২৩

দুদক আমাকে কৌশলে গ্রেফতার করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায়: জাহাঙ্গীর আলম

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে, ততোই নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। ঘটছে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাও। বৃহষ্পতিবার রাতে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী (টেবিল ঘড়ি) জায়েদা খাতুনের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার গাড়িসহ ৪/৫টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। এসময় সাবেক মেয়র ও তার মা সহ কয়েকজন আহত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার গাজীপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতিকের জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। 

নগরীর তার ছয়দানাস্থ বাসভবন প্রাঙ্গনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সাবেক মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের জায়েদা খাতুন বলেন, আমাদের উপর অন্যায়ভাবে হামলা করা হচ্ছে। আমার গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। ভোটাররা যেদ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে জন্য ভোটরদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন মেয়র  প্রার্থী আমার মায়ের নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী । তাই দুদক যেন আইনের নাম করে কোন বেআইনী কাজ করতে না পারে সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন।তানাহলে নির্বাচন ২৫ তারিখে আর দুদক আমাকে কেন ২১ ও ২২ তারিখে তাদের প্রধান কার্যালয়ে তলব করেছে। তারা কৌশলে আমাকে গ্রেফতার করে নির্বাচনী কাজ থেকে দূরে রাখতে এই কাজটি করেছে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যাবহার করে নির্বাচন ও জনগণের ভোট যেন মিথ্যা না করতে পারে এজন্য তিনি অনুরোধ জানান।   

তিনি জানান,নগরীর প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা যখন প্রচার-প্রচরনা করে তখন প্রতিটি নেতাকর্মীদেরকে বিভিন্ন ভাবে কৌশলে বাধা দিচ্ছে। আজমতউল্লা তার নিজস্ব ও দলীয় কিছু সন্ত্রাসী লোক দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে হয়রানী করছে। তিনি অভিযোগ করেন প্রশাসনের কিছু লোক আছে যারা এলাকা ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেন তারা আমার কর্মীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে এবং মোবাইলে তাদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে। অনেকের কাছে টাকাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারা বলছে জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোটটা না করতে পারে। তারা আজমতউল্লা খানকে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। 

তিনি বলেন, নগরীর কোন স্থানে পোস্টার লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার লাগালেও সেগুলো ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে বলেন, আপনারা যদি সুষ্ঠু ভোট করতে না পারেন তবে সব প্রার্থীদের ডেকে বলেন আমরা প্রার্থীতা ছেড়ে দেই। আপনারা ভোটকে অসম্মান করবেন না। জনগণ যাকে ভোট দেবে রায়টা যেন তার পক্ষেই যায়। 

তিনি বলেন গত চার দিন ধরে টঙ্গীতে আজমতউল্লা তার নিজস্ব লোক দিয়ে আমাদের উপর হামলা ও নির্বাচনের প্রচারণায় বাধা প্রদান করছে। তারা আমাকে ও আমার মাকে হত্যা করতে চেয়েছে। আমাদের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জায়েদা খাতুনের পক্ষে তার কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আজমত উল্লা খান জায়েদা খাতুনের সংবাদ সম্মেলন ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে জায়েদা খাতুন বা জাহাঙ্গীর আলমকে প্রচারণায় কোন বাঁধা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা অংশগ্রহনমূলক একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও  গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কাজেই  আমরা কাউকে বাধা দিতে যাব কেন ?’  

তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এরকম মিথ্যাচার ওনি সব সময়ই করে থাকেন, এটি আজকে নতুন নয়। অসংখ্য বানোয়াট ঘটনা তিনি সৃষ্টি করেছেন। ২০১৩ সালেও অসুস্থ না হয়েও তিনি (জাহাঙ্গীর আলম) অ্যাপলো হাসপাতালে তিন দিন আত্নগোপনে থেকে আমাকে দোষারোপ করেছিলেন; আমি নাকি তাকে কিডনাপ করেছিলাম। এ ধরনের দোষারোপ তিনি সবসময়ই করে থাকেন। একবার আমাকে, একবার আওয়ামী লীগকে, একবার মন্ত্রনালয়কে, একবার নির্বাচন কমিশনকে আর একবার তিনি সরকাকে দোষারোপ করছেন। এমন অবস্থা যে, সবোর্চ্চ আদালতও তার দোষারোপের বাইরে না। এটা তার মজ্জাগত স্বভাব। তিনি নিজের অবস্থানের কথা চিন্তা করেই এসব আবলতাবল কথাবার্তা বলছেন। চোখের পানি ফেলে সিম্পেথি  ক্রিয়েট করার চেষ্টা করছে। শত অপরাধ করেও তিনি রুমাল হাতে নিবেন এবং চোখের পানি মুছবেন। এজন্যই এটাকে কেউ আর তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না।’  

হামলার বিষয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও গাড়ির চালক জানান, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের গাড়িতে চড়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মা জায়েদা খাতুনের সঙ্গে টঙ্গীর ৪৪ নং ওয়ার্ডের পাগাড়ের পূর্ব গোপালপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এসময় ১৫-২০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ইটপাটকেল ছুঁড়ে ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। তারা প্রার্থীকে বহনকারী গাড়ি (প্রাডো জীপ) সহ ৪/৫টি গাড়ির ব্যাপক ভাংচুর করে। এতে মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাড়ি চালক শায়ের মাহমুদ শুভ, প্রার্থীর ক্যামেরাম্যান সুলতান মিয়া ও আশরাফুলসহ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে দ্রুত টঙ্গী পূর্ব থানায় নিয়ে গেলে সেখানে আশ্রয় নেন তারা। এঘটনায় মেয়র প্রার্থীর গাড়িচালক শায়ের মাহমুদ শুভ বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি অভিযোগ দেন। এতে রবিউল ইসলাম পাইলট ও খান সুমনসহ ১৫-২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। রাত নটার পর জাহাঙ্গীর আলম তাঁর মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে ছয়দানা এলাকার বাসভবনের উদ্দেশ্যে থানা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হামলাকারীরা আমার মা’কে হত্যার নীল নকশা করেছিল। এ নীল নকশা অনুযায়ী হামলাকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আমাকে ও আমার মা’কে হত্যা করতে চাচ্ছে। তারা ‘জয় বাংলা’ ও ‘নৌকার শ্লোগান’ দিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা আমার গাড়ি এবং আমার মায়ের ওপর প্রথমে ইট মেরেছে। তারা আমার ৭০ বছরের মায়ের গায়ে হাত তুলেছে। হামলায় আমি ও আমার আহত হলেও অল্পের জন্য প্রানে রক্ষা পাই। হামলাকারীরা আমাদের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়ি ও প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মাইক ভাংচুর করেছে। এনিয়ে আমাদের গাড়িতে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা ও হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবী জানাই। 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনও তাদের ভয়ে কিছু করছে না। এটা ভোটের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ হতে পারে না। আমাদের যারা সাপোর্ট করে, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অথবা ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন আমাদের টেবিল ঘড়ি মার্কার ভোটটা না করে। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে শহরের মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। এসময় তিনি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকার আহবান জানান।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম রাতে থানায় এসেএকটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে এই ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এভাবে হামলা করা ঠিক হয়নি। আমাদের কাছে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

জিএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। প্রার্থী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দঁাড়ালেন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরপ্রার্থী ঃ এদিকে গাজীপুর মেট্রো সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান আজমল ভূইয়া শুক্রবার বিকেলে শহরস্থ নিজের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দঁাড়ানোর ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে বা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনি প্রথার প্রচলন না থাকায় আমরা প্রথমে ধরে নিয়েছিলেন, এব্যাপারে দলীয় কোনো বিধি নিষেধ থাকবে না। কিন্তু পরবর্তীতে দল ওয়ার্ড পর্যায়েও এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পরও এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আমার ঠিক হয়নি। ফলে আমার ভ্থলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে দঁাড়ালাম।’ 

শিক্ষিত তরুণ নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসলেই

কলুষিতরা পিছনে চলে যাবে- রনি সরকার

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি (রনি সরকার) বলেছেন, শিক্ষিত মার্জিত তরুণ নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসলেই কিশোর গ্যাং বলেন যারা তরুণ সমাজটাকে কলুষিত করছে তারা আস্তে আস্তে পিছনে চলে যাবে। শুক্রবার সকালে তিনি মহানগরের মাজুখান, হারবাইদ, বিন্দান,মারুকা, কুদাব, মেঘডুব, কলের বাজারসহ পূবাইল থানা এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় রনি সরকার আরো বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মূল সমদ্যা হচ্ছে ধুলা, বালি ও ময়লা আবর্জনা। আমার প্রথম উদ্যোগই থাকবে অন্তত:পক্ষে মানুষ যেন নি:শ্বাস নিতে পাড়ে সেই অবস্থাটা ফিরিয়ে আনা। তিনি আরো বলেন, আমি ৪-৫ বছর সুইডেন, ডেনমার্কের মতো দেশে ছিলাম। আমি দেখেছি তারা তাদের দেশটাকে কিভাবে সুন্দর পরিস্কার পরিছন্ন করে রাখে। এরজন্য আমাদের সিটির ৪০ লক্ষ্য মানুষকে সচেতণ করতে হবে। টঙ্গী- গাজীপুরে কিশোর গ্যাং একটি বড় সমস্যা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে আপনি এটাকে কিভাবে দেখছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রনি সরকার বলেন, কিশোর গ্যাং শুধু না, রাজনীতিটাই একটু কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বেড়িয়ে আসার একটাই পথ, সেটি হচ্ছে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষিত মার্জিত তরুণ নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসলেই কিশোর গ্যাং বলেন যারা তরুণ সমাজটাকে কলুষিত করছে তারা আস্তে আস্তে পিছনে চলে যাবে। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে  রনি বলেন,  ছোট্ট একটা শব্দ পঁাচ বছর; আমি নির্বাচিত হই আর না হই সারা জীবন মানুষের পাশে থাকব- ইনশাল্লাহ। সরকার শাহনুর ইসলাম রনি গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে ওই এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেন। 

সর্বশেষ

Advertisement

সর্বাধিক জনপ্রিয়