ঢাকা,   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

The South Asian Times | সাউথ এশিয়ান টাইমস

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে সরকার: বিএনপি

সাউথ এশিয়ান টাইমস রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১২ এপ্রিল ২০২৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে সরকার: বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও ক্ষমতা দখলের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ব্যবহার করে জনগণের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করার জন্য সরকার ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) এক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

রাজধানীর একটি হোটেলে “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক পরিকল্পনা” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বিএনপি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান।

ফখরুল বলন, “সরকার বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় বসতে এ ধরনের আইন করেছে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তারা এই আইন করেছে, যাতে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে, নির্বাচনের আগে তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে।”

বিএনপি নেতা বলেন, “দেশের নাগরিকদের কথা বলতে ও অভিযোগ জানাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে লিখতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “সরকারও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং অন্যান্য ‘কালো' আইন ব্যবহার করে তাদের বিরোধীদের সম্পূর্ণভাবে দৌড়ের বাইরে রেখে নির্বাচনের বাধা অতিক্রম করতে চায়।”

ফখরুল বলেন, “সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে। সবার আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। এটা এখন দেশ ও জনগণের দাবি।”

ফখরুল বলেন, “সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরও অনেক আইন করেছে যাতে দেশের নাগরিকরা কথা বলতে ভয় পায়।”

তিনি বলেন, “১৯৮৪ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র রয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে যে, কীভাবে উত্তর কোরিয়ায় তার নাগরিকদের ভয় দেখিয়ে এবং সেই জাতিকে দাসত্ব করার জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে রাখা এবং তার ও আরও অনেক সাংবাদিক ভাইয়ের বিরুদ্ধে ডিএসএ মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এর প্রতিফলন শুরু হয়েছে।”

বিএনপি নেতা বলেন, “সরকার অনেক সাংবাদিক ও সাইবার কর্মীকে জেলে, নির্যাতন ও গুম করেছে।”

র‌্যাবের ওপর ডয়চে ভেলের একটি তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার নেওয়া নাফিজ মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করার জন্যও তিনি সরকারের নিন্দা জানান। ফখরুল বলেন, “পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলায় নাফিজকে মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা তাদের (সরকার) পুরনো অভ্যাস। এটা তাদের অস্ত্রও বটে। তাদের কাছে এরকম অনেক অস্ত্র আছে এবং তারা সেই অস্ত্রগুলোকে একের পর এক ব্যবহার করে নাগরিকদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এবং এভাবে তারা নিজেদের মতো করে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করছে।”

তিনি বলেন, “বিচার বিভাগে ন্যায়বিচার পাওয়া এখন ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ প্রশাসনকে পুরোপুরি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত ধ্বংস হয়ে গেছে।”

বিএনপি নেতা বলেন, “বর্তমান আওয়ামী সরকার একটি অনির্বাচিত, অবৈধ ও দখলদার সরকার। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি দখলদার শাসন হিসাবে কাজ করছে এবং দেশকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের মৌলিক বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করছে এবং একটি গণতন্ত্রপ্রিয় জাতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের গণতান্ত্রিক আত্মাকে ধ্বংস করে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্রের আড়ালে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং গণমুখী সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার বিকল্প নেই।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা-১৯৪৮-এর পরিপন্থী হওয়ায় ডিএসএ প্রত্যাহার করতে হবে।”

মূল প্রবন্ধে আসাদুজ্জামান বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিঃসন্দেহে একটি বিতর্কিত আইন, যা সরকারের ভিন্নমত ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই আইনের প্রয়োগ শুধুমাত্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকারকেই প্রভাবিত করে না বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেও প্রভাবিত করে। যা আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব সাইফুল হক, জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ। সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমান।

সর্বশেষ

Advertisement

সর্বাধিক জনপ্রিয়