
সমালোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না সুনামগঞ্জের জাউয়া বাজার ডিগ্রি কলেজের। অনিয়ম, দুর্নীতি, সেচ্ছাচারিতা, ফান্ড নয় ছয়সহ নানান আলোচনা সমালোচনার পর এবার সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে জেলার ছাতক উপজেলার এই কলেজ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নাম।
সোমবার শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এবারের এইচএসসি পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে শুরু হয় নানান আলোচনা।
ফলাফলে দেখা যায় কলেজে মোট পরীক্ষার্থী ৬৮৪ জনের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ১১৮ জন। তার মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১০২ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ জনই অকৃতকার্য।
একটি বিভাগের নজিরবিহীন বেহাল এই অবস্থা দেখে কলেজের পাঠদান এবং সেচ্ছাচারিতা নিয়ে সবার সমালোচনার তীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিশংকর ভৌমিকের দিকে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে নিয়ে চায়ের দোকানে আলোচনা তুঙ্গে।
নানান আলোচনা সমালোচনা করে এলাকাবাসীরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি পরিমাণ সেচ্ছাচারিতা এবং পাঠদানে দায়িত্ববোধ না থাকলে একটি বিভাগের অর্ধেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয় তা বোধগম্য নয়। কলেজটিকে তারা আড্ডাস্থল বানিয়ে ফেলছে। আর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজের চেয়ার বাঁচাতে নিজেই এসকল সুযোগ তৈরি করে দেন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এই পাসের হার আমাদের জন্য খুব লজ্জার জানিয়ে তারা আরও বলেন, এসকল কিছু হচ্ছে শুধু মাত্র যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে। কলেজ প্রধান যদি নিজেই অযোগ্য হোন তাহলে তো শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠদানের এমন নাজেহাল অবস্থা হবেই। এবং এটা স্বাভাবিক।
শিক্ষকদের গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, নিয়মিত ক্লাস না নেয়া ও অভিভাবকদের অসচেতনতার এবং শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদানে অনুপস্থিতি ও অমনযোগী এসব কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারেনি বলে অভিমত পোষণ করেছেন স্থানীয় শিক্ষাবিদরা। শিক্ষকদের মধ্যকার দলাদলি, সর্বোপরি শিক্ষার্থীরা শ্রেণি পাঠে অনিয়মিত থাকলেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ এ বিপর্যয়ের কারণ।
এ বিষয়ে কলেজের এডহক কমিটির সদস্য আব্দুল জব্বার জানান, আমি কলেজের কমিটিতে নতুন। তাই অনেক কিছুই জানি না। তবে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এমন ফলাফল আসলেই দুঃখজনক।
এখানে কারও গাফিলতি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, অবশ্যই এখানে আমাদের সবার গাফলতি রয়েছে। আমরা খুব দ্রুত সবাইকে নিয়ে এই বিষয়ে কাজ করবো। যাতে মূল সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
হিসাব বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক লিটন কুমার বলেন, এত অকৃতকার্য সত্যি দুঃখজনক। তবে বাহির থেকে অনেক কিছুই দেখা যায় না। আমাদের এই বিপর্যয়ের কারণ হলো, ভর্তির সময় অনেক শিক্ষার্থী তার চাহিদামত বিভাগপ আসন পায় না। পরবর্তীতে তারা ব্যবসায় শিক্ষায় আসে। এটাই আসল সমস্যা। আর যারা এভাবে আসে তারাই ফলাফলে এমন করে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিশংকর ভৌমিক বলেন, আমি এখনও রেজাল্ট শিট দেখিনি। তবে ব্যবসায় শিক্ষায় ১০২ জনের মধ্যে ৪৮ জনই অকৃতকার্য হয় তাহলে এটি অবশ্যই ভাবার বিষয়। এসময় তিনি আরও বলেন, কলেজ খুললে আমি এবিষয়ে মিটিং করে দেখবো মূল কারণগুলো।
উল্লেখ, এর আগে জাউয়াবাজার ডিগ্রি কলেজের অনিয়ম দুর্নীতি, ফান্ডের টাকা লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, অবৈধ শিক্ষক নিয়োগ, এবং অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দেয় হয়। এবং বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে।
এসএটি/জেডএম